বাংলাদেশে উদ্ভাবিত নতুন ‘ডায়াবেটিক ধান’ সম্পর্কে বিস্তারিত
আপনারা সকলে জানেন আমাদের এই সোনালী দেশ বাংলাদেশ হচ্ছে একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর আমাদের সেই কৃষির প্রধান ফসল হচ্ছে ধান। কিন্তু আমাদের এই দেশের যেমন ধান প্রধান ফসল তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঋতু। যা কখনো কখনো ধানের প্রতিকূল পরিবেশ আবার কখনো অন্য কোন পরিবেশ তৈরি করে থাকে। তাই এর জন্য বাংলাদেশের ধার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের রিসার্চ হয়ে থাকে। আজকে আমরা তার একটি ফলাফল জানাতে এসেছি।
বাংলাদেশের এই ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ফলনশীল ধান উদ্ভাবন করে চলেছে। তার মধ্যে একটি নতুন ধানের জাত হলো ডায়াবেটিক ধান। যা সম্প্রতি ইনস্টিটিউট প্রকাশ করেছে। তাদের এই উৎপাদিত নতুন ধান সম্পর্কেই আজকের বিস্তারিত রিপোর্ট।
বাংলাদেশের উদ্ভাবিত নতুন ডায়াবেটিক ধান
সম্প্রতি বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট দুটি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বলে জানিয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো ডায়াবেটিক ধান আরেকটি এখনও নাম জানা যায়নি। এর মধ্যে একটি জাতের ধানের চাল ভিন্ন ধরনের গুণাগুণ সম্পন্ন হওয়ায় একে ডায়াবেটিক ধান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আর দ্বিতীয় ধানটি হচ্ছে যা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে জোয়ার ভাটা বা উপকূলীয় অঞ্চলে চাষ করা সম্ভব বলে তারা জানিয়েছে। এই ধানের জাত উপকূলীয় অঞ্চলে ভালো ফলন দেবে বলে তারা জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জানিয়েছেন তাদের উদ্ভাবিত নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৫ যাকে তারা ” ডায়াবেটিক ধান” বলেও আখ্যায়িত করেছেন। এই দুটি জাতের ধানি বাংলাদেশ বীজ বোর্ড থেকে অনুমোদন পেয়েছে। যার ফলে এগুলো মাঠ পর্যায়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও উৎপাদন করা যাবে।
ডায়াবেটিক ধান কি
সকল প্রজাতির ধানি একই রকম চাল দিলেও চালের গুণগত মানের ভিত্তিতে ধানের জাতকে ভিন্ন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ডায়াবেটিক ধান বলতে বলা হয়েছে এই ধানের চাল গুণগত বৈশিষ্ট্য গত কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হবে।
ধানটিকে ডায়াবেটিক ধান বলার কারণ
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে নতুন উৎপাদিত ধানের জাত বিধান 105 ধানটিকে ডায়াবেটিক ধান বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কারণ এই ধানটির চাল কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা জিআই সম্পন্ন হওয়ার কারণে এই ধানটিকে ডায়াবেটিক ধান বলা হয়েছে।
সাধারণত খাদ্যে জিআই মাত্রা ৫৫ এর নিচে থাকলে তা কম জিআই সম্পন্ন বলা হয়ে থাকে। আর এই ধানে এর মাত্রা ৫৫ এর নিচে পাওয়া গেছে তাই একে জিআই কম সম্পন্ন ধান বলা হচ্ছে। এই ধানের চালে পুষ্টির মাত্রা যেমন বেশি থাকবে ঠিক তেমন জিআই মাত্রা কম থাকায় এটি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উপকারী। মূলত এই ধানে কার্বোহাইড্রেট মাত্রা কম থাকায় একে “ডায়াবেটিক ধান” বলা হয়েছে।
যদিও এর আগে কম যে সম্পন্ন আরো অনেক ধান বাংলাদেশে উদ্ভাবিত হয়েছে তবে তার মধ্যে এবারের ধান জাত “বিধান 105” হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান। গবেষকগণ বলছেন এ ধানের ফলন হেক্টর প্রতি সাত টনের বেশি হতে পারে।
এই “বিধান ১০৫” জাতের ধানটি বোরো ধান উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশে চাষ করার উপযোগী। আরো বলা হয়েছে এ ধানটি বপন করার ১৪৮ দিন পর ফসল তোলা যাবে।
“ব্রি ধান ১০৫” এ জাতের ধানটিকে সনাক্ত করার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর পাতা সবুজ ও খাড়া ডিগ পাতা আর দানা মাঝারি লম্বা ও চিকন। এমনকি এ ধানটি পেকে যাওয়ার পরেও এর গাছ সবুজ থাকে।
এই নতুন বিধান ১০৫ জাতের ধান থেকে পাওয়া চাল রান্না করলে ভাত ঝরঝরে ও সুস্বাদু হবে।
বাংলাদেশের উদ্ভাবিত কিছু উত্তর ফলনশীল ধানের জাত
এখন আমরা আপনাদের সামনে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাতের ধানগুলো সম্পর্কে জানাবো। বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিনিয়তই ধার নিয়ে অনেক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা জানিয়েছে এ পর্যন্ত ১০২টি (৯৫ টি ইনব্রিড ও ৭টি হাইব্রিড) উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু হল:
বড় মৌসুমে চাষের জন্য ৪৩টি জাত (বোরো ও আউশ উভয় মওসুম উপযোগী)
আউট মৌসুমে চাষের উপযোগী ২৫টি জাত বোনা এবং রোপা
আমন মৌসুমের উপযোগী ৪৫টি ধানের জাত রোপা
১২টি জাত বোরো ও আউশ – উভয় মওসুম উপযোগী
১টি জাত বোরো, আউশ এবং রোপা আমন মওসুম উপযোগী
এবং ১টি জাত বোনা আমন মওসুম উপযোগী।